Sunday 12 May 2024

Goyenda Manik 2nd Audio Story

 'গোয়েন্দা মানিক' সিরিজ, প্রায় ফেলুদা , কিন্তু নয় ফেলুদা । 

শুনুন ইউটিউব চ্যানেল দেজ এন্টারটেইনমেন্ট - এর নিবেদন 

অডিও স্টোরি  Duaars er Chita Rahasya

লেখক ইভান গুপ্ত 

Note :  Link of the content provided above is Author's Copy. Downloading is prohibited 🚫 To message author mail at  swamiguptagyan@gmail.com



Wednesday 13 September 2023

কিসসা তিন্নু কা !

 ওরে বাবা,   তুমি এসে গেছ  !  

----  রচনা ইভান গুপ্ত 

সন ১৯৬৫ । 
ট্রেনের থার্ড ক্লাস কামরায়, দুইদিন ধরে, সুদূর বোম্বে থেকে যাত্রা করে, যে ছেলেটি  হাওড়া স্টেশনে এসে নামল , তার তখন খুবই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত অবস্থা । এর আগে কখনো থার্ড ক্লাসে ভ্রমণ সে করেনি । কিন্তু এবারে তো থার্ড ক্লাসে আসা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না তার । বাবা তাকে থার্ড ক্লাসের টিকিট ধরিয়ে বলেছিলেন  " আমি তোমাকে ট্রেনের ফার্স্ট বা সেকেন্ড ক্লাসের টিকিট , এমনকি প্লেনের টিকিটও দিতে পারতাম , তা তুমি জানো । কিন্তু জীবনের লড়াই যখন করতে নামছো, তখন শেষ থেকে শুরু করাই ভালো । হাওড়া স্টেশনে নেমে ছেলেটি তার বোম্বের বাড়িতে একটা ফোন করে, অপারেটরের সাহায্যে পাওয়া  কলে, তার বাবাকে জানায় যে সে কলকাতায় পৌঁছে গেছে । ছেলেটির জন্য আরো হতাশা জমা ছিল । 

তার বাবা তাকে বলেন  " তুমি  টিকিট কেটে বাড়ি ফিরে এসো । কারণ যার সাথে কাজ করতে তুমি গেছো, উনি আমাকে একটা চিঠি দেন, যেটা তুমি রওনা হবার পরে আমি পাই । তাতে উনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান যে ওনার ছবির প্রডিউসার,  সপ্তম  সহকারির টাকা দিতে পারবেন না জানিয়েছেন ।  তাই উনি বলেছেন তোমাকে এখনই না পাঠাতে । কিন্তু উনি তোমাকে কাজের সুযোগ অবশ্যই দেবেন বলেছেন । পরের বছর উনি যে সিনেমাটায় কাজ শুরু করবেন তাতে তোমাকে সহকারি হিসেবে নেবেন। তুমি এক কাজ কর । তুমি যখন কলকাতাতে পৌঁছেই গেছো , একবার ওনার সঙ্গে দেখা করো । তারপর ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফিরে এসো "। 

ফোন রেখে দিয়ে ছেলেটি পাশের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে সম্পূর্ণ হতাশ অবস্থায় । তার মানসিক হতাশা তাকে এমনই দুর্বল করে দিয়েছিল যে সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না । ছেলেটি যতক্ষণ হতাশ হয়ে বেঞ্চিতে বসে আছে এবং চারপাশের ব্যস্ত সম্মত লোকজনের হেঁটে যাওয়া উদাস চোখে দেখছে ততক্ষণে আপনাদের কয়েকটা দরকারি কথা বলে রাখি । ছেলেটির নাম তিন্নু ।  ছেলেটি যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে তিনি একজন চিত্রপরিচালক সত্যজিত রায় । তিন্নুর বাবা লেখক ইন্দর রাজ আনন্দ ছিলেন সত্যজিতের বন্ধু । নিজে সিনেমা জগতের লেখক হলেও ইন্দরজি কখনই চাননি তার দুই ছেলে তিন্নু ও বিট্টু এই জগতে আসুক । কিন্তু তিন্নুর খুব ইচ্ছে ছবি তৈরী করার । অবশেষে ছেলের আব্দার মেনে নিয়ে বাবা বললেন : শিখতেই যদি হয় দেন লার্ন ফ্রম দা বেস্ট ।  ইন্দরজির অনুরোধেই সত্যজিত রায় তিন্নু কে  কাজের সুযোগ দেন । সত্যজিতের যে ছবিটিতে সপ্তম সহকারি হিসেবে কাজ করার ও কাজ শেখার, অনেক আশা নিয়ে তিন্নু  এসেছে , সেই ছবিটির নাম 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' । শুটিং শুরু হবে জানুয়ারি থেকে, তিন্নু কলকাতায় এসেছে ডিসেম্বরে । তিন্নুর  দুর্ভাগ্য যে সে রওনা হওয়ার পরেই তার বাবা, সত্যজিৎ রায়ের চিঠিটি হাতে পান।  
আসুন আবার ফিরে যাই তিন্নুর কাছে ।
মনে হচ্ছে তিন্নু মন থেকে হতাশা খানিকটা কেটে গিয়ে, একটা হালকা রাগ উঠে আসছে। এই রাগ তার দুর্ভাগ্যের প্রতি । দুই দিন ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চেপে এত কষ্ট করে, এত আশা নিয়ে এসে, শেষে কিনা ....... । তিন্নু ঠিক করলো , তার বাবা যেমন বলেছেন সেটাই করবে । কলকাতায় যখন এসেই পড়েছে , একবার সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবে , তারপর ফেরত ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি চলে যাবে । সত্যজিৎ রায় কে ফোন করলো তিন্নু ও নিজের পরিচয় দিলো । 

ফোনের ওপার থেকে ভেসে এলো গম গমে কন্ঠস্বর  "ওরে বাবা !  তুমি এসে গেছ  ? " 
 তিন্নু ইংরেজিতে বলতে বাধ্য হয়  "স্যার আমি একটুও বাংলা বুঝিনা "। 
ভদ্রলোক তখন ইংরেজিতে বললেন  " কিন্তু আমি তোমার বাবা কে একটা চিঠি দিয়ে ছিলাম ......" ।  
তখন তিন্নু কে আরো খানিকটা বলতে হয় । 
সব শুনে উনি বলেন  "হুম্ , তুমি সকালে কটায় ঘুম থেকে ওঠো ? " 
 তিন্নু বলে "স্যার আপনি যে সময় বলবেন আমি হাজির হয়ে যাব " । 
উনি বলেন " ঠিক আছে , কাল তুমি সকাল আটটায় আমার বাড়ি চলে এসো "।

তখন ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় ভালোই ঠান্ডা পড়তো। দেরী যাতে না হয় , সেই ভয়ে , পরের দিন সকালে তিন্নু  সাড়ে সাতটার সময় সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির কাছে পৌঁছে যায় এবং বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে যতক্ষণ না আটটা বাজে । ঠিক আটটায় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার কলিং বেল বাজায় এবং দরজা খোলেন সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার এক ভদ্রলোক , ভয়ানক গম গমে গলায় বলেন  "এসো এসো । তুমি একটু বসো " । 
বলে দিতে হবে কি ভদ্রলোকের নাম ?  বোধ হয় না ।
ভদ্রলোক আবার বললেন  " তুমি মিনিট কুড়ি বসো ।  চা খাও । আমি হাতের একটা কাজ সেরে নিই "।  সোফায় বসে  চা খেতে খেতে তিন্নু  দেখে, ভদ্রলোক তার দিকে পেছন ফিরে , চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা একটা টাইপরাইটারে কি যেন টাইপ করে চলেছেন । তিন্নু  মনে মনে ভাবে  "সেই যদি আমাকে কুড়ি মিনিট বসিয়েই রাখবে, তাহলে আর আটটায় আসতে বলল কেন ! না হয় আরেকটু ঘুমাতাম "। কুড়ি মিনিট শেষ হয় এবং সেই সাথে শেষ হয় ভদ্রলোকের টাইপ করা । ৭ টা ফুলস্কেপ টাইপ করা কাগজ স্টেপল করে , তিন্নুর  হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন  "এই নাও । আমি আজ ভোর চারটায় উঠে এই কাজটা শুরু করি । শেষ করতে একটু বেশী সময় লেগে গেল তাই তোমায় বসতে হলো  "। 

পুরো গুপী গাইন ছবির ইংরেজি সিনোপসিস কাগজে টাইপ করা, যাতে কাজ করতে গিয়ে তিন্নুর , গল্পটা অজানা থাকায়, কোন অসুবিধা না হয়। হতভম্ব তিন্নু ইংরেজিতে বলে  "কিন্তু স্যার , বাবা বললেন , আপনি লিখেছেন, প্রোডিউসার নাকি আর একজন সহকারির টাকা........" । 
ভদ্রলোক বললেন " হ্যা, কিন্তু সে ঠিক আছে । তুমি যখন এত দূর থেকে এসেই পড়েছ .....; প্রডিউসার যা দেবে তাতেই হয়ে যাবে এখন। না হয় আমরা ইউনিটের সবাই একটা করে রুটি কম খাবো, তাতে কি হয়েছে !" 
ছোকরা তিন্নুর  যাত্রা শুরু হলো এবং রাজস্থানে শুটিং এর সময় হাল্লা রাজার সৈন্য সামন্ত কে লাউডস্পিকারে বিভিন্ন হিন্দি নির্দেশ দেওয়ার কাজে তিন্নু মুখ্য ভুমিকা পালন করে ও আস্তে আস্তে হয়ে ওঠে চিত্র পরিচালকের সপ্তম সহকারি থেকে ওনার ডান হাত । 

অমিতাভ বচ্চনকে  নিয়ে চার চারটে ছবি করা বোম্বের এই প্রথম সারির চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, লেখক ও অভিনেতা, তিন্নু আনন্দ , ভালো নাম বিজয় রাজ আনন্দ, এখনো সত্যজিত রায়ের এই মানবিক দিকের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এবং খুব জোর দিয়ে বলেন " কোন পরিচালক একজন সাত নম্বর সহকারির জন্য এতটা কখন করেননি । 

তিন্নু আনন্দ সিনেমা তৈরীর খুঁটিনাটি সব কাজ শেখার ক্ষেত্রে সত্যজিত রায়কে এক বাক্যে তার গুরু বলে মানেন । 

লেখকের বক্তব্য : 
দা ওয়াল চ্যানেলে তিন্নু আনন্দের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশের ওপর নির্ভর করে এটি লেখা হয়েছে । আপনারা সাক্ষাৎকারটি দেখতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়ে : 

সমাপ্ত 


Monday 4 September 2023

ফ্যান ফিকশন কপিরাইট

 ফ্যান ফিকশন কপিরাইট : মুখোমুখি লেখক ইভান গুপ্ত


১) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : প্রথমেই যেটা জিজ্ঞাসা করব সেটা হল ফ্যান ফিকশন লেখা কি অপরাধ ? 

ইভান : একেবারেই নয়  । যে কেউ চাইলেই ফ্যান ফিকশন লিখতে পারেন ।

২) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : কিন্তু তাহলে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অডিও স্টোরি যারা বানায় তারা টেক ডাউন নোটিশ পাচ্ছেন, তাদের ভিডিওকে স্ট্রাইক করা হচ্ছে , ইত্যাদি । এটা কেন  ?

ইভান : ফ্যান ফিকশন লেখা , অরিজিনাল ফিকশনকেই কমপ্লিমেন্ট করে  । সুতরাং যে কেউ , তার যদি কোন গল্পের চরিত্র কে পছন্দ হয় , সে যদি সেই গল্পের লেখকের ভক্ত হয় , তাহলে সে চাইলেই ফ্যান ফিকশন লিখতে পারে এবং তার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনকে সেই গল্প পড়ে শোনাতে পারে বা সেই গল্প থেকে নাটক বা যে কোন কিছু অডিও স্টোরি বানিয়ে সে তাদের শোনাতে পারে , দেখাতে পারে । এই অব্দি কোন অপরাধ নয়  । সমস্যাটা তখনই শুরু হয় যখন কেউ সেই ফ্যান ফিকশন থেকে কোন অডিও স্টোরি বানিয়ে, ব্যবসায়িকভাবে সেটা কাউকে শোনাতে গেল বা দেখাতে গেল বিনা অনুমতি নিয়ে । অর্থাৎ সে যদি কোন বাণিজ্যিক লাভ করে , সেই ক্ষেত্রেই হয়ে যায় অপরাধ । কারণ হচ্ছে , মূল যে চরিত্রগুলো  যেমন কাকাবাবু বা ব্যোমকেশ বা ফেলুদা ..... , সেই চরিত্রের নামটাকে অর্থাৎ ফেলুদা নামটা বা 'প্রদোষ চন্দ্র মিত্র' এই পুরো নামটা , বা চরিত্রের স্কেচ, একটা ব্র্যান্ড যেটা অন্য একজনের আইডিয়া ।  সেই ব্র্যান্ডটাকে তো  ব্যবহার করছে , ব্যবহার করতে গেলে সেই ব্র্যান্ডের যে কপিরাইট হোল্ডার , তার অনুমতি নিতে হবে , যদি সে ব্যবসায়িকভাবে সেটাকে করতে চায় । নইলে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইন লঙ্ঘন হয় । 

৩) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  :  তার মানে আপনি বলছেন যে যারা এই ধরনের নানান রকম নোটিশ পাচ্ছেন বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই ধরনের চিঠি পাচ্ছেন , তারা ফ্যান ফিকশন এর যে নিয়মটা,  সেটা  মান্য করছেন না  ?

ইভান : একেবারেই করছে না । ব্যাপারটা হলো যে , ইউটিউবে একটা চরিত্রের ফ্যান ফিকশন আপনি আনুন ,  সেটা ইউটিউবে আপনি দেখান , আপনি আপনার মনিটাইজেশন  অর্থাৎ যেটা থেকে ইউটিউবে চ্যানেলটাকে চালিয়ে যে ইনকামটা হয়, প্রচুর মানুষের ভিউ হলে, ইউটিউব যে টাকাটা দেয় বছরে আপনাকে, সেই অপশনটা আপনি অফ করে দিলেন বা ভিডিওটাকে আপনি প্রাইভেট করে দিলেন , মনিটাইজেশন অনেক সময় অটো অন হয়ে যায় , আপনি ভিডিওটাকে প্রাইভেট করে দিন অর্থাৎ আপনি যাদের যাদের লিংক পাঠাবেন তারাই একমাত্র সেটা দেখতে পারবে  । কিন্তু আপনি সেটা না করে পপুলার কোন লিটারারি ক্যারেক্টারের ছবি , তার নাম ইত্যাদি দিয়ে , আপনি একটা গল্পকে মানুষের কাছে তুলে ধরছেন , সেটা তো অবশ্যই একটা ভুল কাজ  । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, আইনি ঝামেলা কে মানুষ ভয় পায় কিন্তু তবুও আইনটা ভালো ভাবে না জেনেই কাজ শুরু করে ফেলে ।

৪) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও দেখছি যে ফ্যান ফিকশন কিন্তু ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে । মানুষের ফ্যান ফিকশন এর প্রতি এই আগ্রহটা এত বেশি করে কেন ? 

ইভান : সেটা খুবই অর্থবহ । কারণ বিদেশে ফ্যান ফিকশন তো বরাবরই অনেকদিন ধরেই চলছে । ওখানে ফ্যানফিকশনের একটা আলাদা genre রয়েছে , কিন্তু আমাদের দেশে ফ্যান ফিকশন সেই ভাবে নেই , সেরকম ভাবে ছিল না একটা সময় পর্যন্ত । নামকরা পত্র পত্রিকায় অর্থাৎ যেগুলো মানুষ চট করে কিনতে পারেন, সেখানে নতুন মৌলিক বাংলা গল্প তেমন মানের হচ্ছে না । নাম করা লেখকদের একটি বড় অংশ আর জীবিত নেই  ।  একটা শূন্যতা তৈরী হয়েছে যেটা এই ফ্যান ফিকশন পুরন করছে  ।  

৫) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : এই শূন্যতা পুরোনে অডিও স্টোরি চ্যানেলগুলোর ভুমিকা  ?

ইভান : ভুমিকা তো যথেষ্টই হতে পারতো  কিন্তু সেটা হলো কই  ! এরাই পারতেন ভালো মৌলিক গল্প কে মানুষের সামনে নিয়ে আসতে  । কিন্তু সেটা না করে , শর্ট কাট নিলো  । শুধুই  ব্যোমকেশ , তারানাথ তান্ত্রিক, ফেলুদা , কাকাবাবু ফ্যান ফিকশন  ।  জনপ্রিয় চরিত্র নিয়ে কিছু করলে , অনেক ভিউ হবে  ....... এই সব আর কি  । 

৬) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : আপনার নিজের ফ্যান ফিকশন লেখা নিয়ে কিছু বলুন । 

ইভান : আমিই প্রথম ফেলুদা কে নিয়ে ফ্যান ফিকশন লিখি । নতুন ফেলুদা পাই না বলেই , একদিন নিজেই একটা প্যারা লিখলাম । তারপর সেটা বাড়তে বাড়তে একটা সম্পূর্ন গল্প হয়ে গেলো  ।  যেটা লিখলাম সেটা কে যে ফ্যান ফিকশন বলে সেটাও আমি পরে জেনেছি ।  আমাকে  উকিলের সাথে কথা বলে, ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে জানতে হয়েছে  ফ্যান ফিকশন এর আইন কানুন কি  । তারপর তো এই  'সত্যজিত রায় ক্রিয়েসনস' ফেসবুক পেজে ও ব্লগে  সেই গল্প ধারাবাহিক ভাবে বেরোয় । একটি নেট ম্যাগাজিনেও বেরোয় । কোন বাণিজ্যিক লাভ, এর কোনটাতেই ছিল না । 

৭) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : আপনি ফেলুদা ফ্যান ফিকশন লিখেছেন চারটে আর শঙ্কু ফ্যান ফিকশন একটা । এছাড়া  মৌলিক গল্প  : অলৌকিক, ভুতের , হাসির ও কল্পবিজ্ঞানের গল্পও লিখেছেন  । আপনার ফেলুদা ফ্যান ফিকশন নিয়ে একাধিক অডিও স্টোরি হয়েছে ।

ইভান : লেখকের কাজ লেখা । আমি লিখেছি । বিভিন্ন চ্যানেল থেকে যোগাযোগ করে বলা হয় যে তারা অডিও স্টোরি করতে চায় । আমি কোন বাণিজ্যিক লাভ না করে সেই অনুমতি দিই  এবং এটাও বলা আছে সেখানে যে এই অডিও স্টোরি বানাতে গিয়ে যদি কোন প্রকারের আইন লঙ্ঘন হয় তাহলে  চ্যানেল সেই কাজ যেন না করে । আমার পক্ষে তো জানা সম্ভব নয় কোন চ্যানেল পাবলিক ভিউইং করছে আর কে প্রাইভেট ভিউইং করছে । তবে এসব আগের কথা । ফ্যান ফিকশন আমি আর লিখবো না । গোয়েন্দা মানিক নামে একটি চরিত্র তৈরী করে একাধিক গল্প লিখেছি । ভবিষ্যতে গোয়েন্দা গল্প  আরো লিখলে, এই গোয়েন্দা মানিক কে নিয়েই লিখবো । 

৮) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : ফ্যান ফিকশনে কপি রাইট এর সময় সীমা খুব গুরুত্বপুর্ন বোধহয়  ?

ইভান : ওটাই আসল  ।  লেখক মারা যাবার পরের বছর থেকে ৬০ বছর অব্দি কপিরাইট সময় সীমা থাকে আমাদের দেশে, যদি না অন্য রকম কোন চুক্তি থাকে । 

৯) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : যারা ৬০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোন গল্প নিয়ে কাজ করবেন তাদের কোন বাধা নেই  ?

ইভান : বাধা থাকার কথা নয় । কিন্তু এইটাও বলি, বাধা নেই মানেই যা খুশি লেখা নয়  । ফ্যান ফিকশন লেখার কত গুলো নিয়ম আছে । মূল লেখকের রচনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে , লিখতে হয় । চরিত্রকে দিয়ে যা খুশী বলিয়ে বা করিয়ে নেওয়া যায় না ।  কিন্তু সেইটাই অনেকে করছেন । ফেলুদার সিগারেট ছাড়িয়ে তাকে ভাজা মৌরি না কি যেন খাওয়াচ্ছেন । অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন লেখক ও চ্যানেল মালিক দুজনেই । 

১০) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : কোন পরিবর্তনই কি উচিত নয়  ?

ইভান : কিছুটা আবশ্যিক । যেমন ফেলুদা ফ্যান ফিকশনে, ফেলুদা যদি আজকের সময়ে তদন্ত করেন এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার না করেন, নেট সার্ফ না করেন সেটা অবাস্তব । ফেলুদা যদি নন ফিল্টার চারমিনার খান সেটাও অবাস্তব কারন আমরা জানি এখন ওই ব্র্যান্ড উপলব্ধ নয় । বাস্তব থেকে সরা চলবে না । সত্যজিৎ রায় যখন ফেলুদা লিখেছিলেন তখন যেটা বাস্তব ছিল সেটাই লিখেছিলেন । লেখক জীবিত থাকলে এখন যে ভাবে লিখতেন সেইটা অনুমান করেই একজন ভাল ফ্যান ফিকশন লেখক লেখেন । আপনি কোন পিরিয়ডে আপনার গল্প রাখছেন সেইটা ইম্পর্ট্যান্ট ।

১১) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  : একজন ফ্যান ফিকশন লেখক ও একজন মৌলিক গল্প লেখকের মধ্যে কি পার্থক্য  ?

ইভান : ভালো হলে একটাই পার্থক্য । ফ্যান ফিকশন লেখক চাইলেই মৌলিক লেখা লিখতে পারেন কিন্তু  একজন মৌলিক গল্প লেখক চাইলেই ফ্যান ফিকশন লিখতে পারবেন না । ইন ফ্যাক্ট ফ্যান ফিকশন লেখক তো মৌলিক লেখাই লিখছেন, গল্পের প্লট তো তার নিজের । শুধু মুল কিছু চরিত্রের নাম ও ভাব ভঙ্গি বাদ দিয়ে । এবং তিনি একজন বিখ্যাত লেখকের গল্প বলার স্টাইলেই গল্পটা বলছেন । তার জন্য অনেকদিন ধরে তাকে সেই স্টাইলটা স্টাডি করতে হয়েছে, এবং তার নিজের মুন্সিয়ানা তো থাকতে হবেই । 

১২) সত্যজিৎ রায় ক্রিয়েসনস্  :  শেষ প্রশ্ন । আমাদের দেশে অডিও স্টোরির ভবিষ্যত কেমন বলে মনে হয় ? 

ইভান : খুবই উজ্জ্বল । সাধারণ মানুষের রিডিং হ্যাবিট কিন্তু বেড়ে গেছে । সে হোয়াটসঅ্যাপ , ফেসবুক , পিডিএফ এই সবে কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশী কনটেন্ট পড়ছে । আর ছাপা বই এর দাম বেড়ে গেছে অনেক । সেই তুলনায় ই-বুক পড়া অনেক খরচ কম । আর একটা বিরাট বড় সংখ্যার মানুষের গল্প জানার ইচ্ছে আছে কিন্তু পড়ার সময় নেই । তারা কাজ করতে করতে অডিও স্টোরি রূপান্তর শুনছেন । বিদেশে তো অডিও বুকের বিক্রীই বেশী । আগে অনেক ভালো লেখক, বড় বই প্রকাশকদের কাছে পাত্তাই পেতো না । এখন মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া অনেক সহজ । একটা ব্যাপার বড় বড় প্রকাশক, চিত্র পরিচালক, ইউটিউব চ্যানেল মালিক, অন্য যে কোন মাধ্যম ও সাধারন মানুষ কে বুঝে নিতে হবে । সব চেয়ে শক্তিশালী হলো কন্সেপ্ট যার, আইডিয়া যার, যিনি লেখক । তার সৃষ্টি নিয়েই সিনেমা, নাটক, অডিও স্টোরি এই সব কান্ড হচ্ছে । তাঁকে সেই গুরুত্বটা দিতে হবে, টাকায় ও সম্মানে । লেখকদেরও নিজের গুরুত্ব বুঝতে হবে । 

সমাপ্ত 
© Copyright : All Rights Reserved

লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন swamiguptagyan@gmail.com 


Monday 28 August 2023

Goyenda Manik Audio Story

'গোয়েন্দা মানিক' সিরিজ, প্রায় ফেলুদা , কিন্তু নয় ফেলুদা । 

শুনুন ইউটিউব চ্যানেল দেজ এন্টারটেইনমেন্ট - এর নিবেদন 

অডিও স্টোরি  Maidane Murder 

লেখক ইভান গুপ্ত 

Note :  Link of the content provided above is Author's Copy. Downloading is prohibited 🚫 To message author mail at  swamiguptagyan@gmail.com

 


Saturday 8 July 2023

Article ষষ্ঠ ফেলুদা

 ষষ্ঠ ফেলুদা 

---- রচনা ইভান গুপ্ত

সাবাশ পরমব্রত ও অরিন্দম !  

কি ভাবছেন ? বলবো 'সাবাশ ফেলুদা' দারুন হয়েছে ? আসলে ঠিক তা নয় । ব্যাপার আরো গভীর । 

ভারতবর্ষে প্রথম ফেলুদা ফ্যান ফিকশন আমিই লিখেছিলাম : ময়দানে মার্ডার । ফ্যান ফিকশন লিখতে গেলে মূল লেখা ও লেখক কে নিয়ে বেশ পড়াশোনা ও ভাবনাচিন্তা করতে হয় । ফেলুদা নিয়ে কিঞ্চিত নাড়াঘাঁটা করেছি । ফিল্ম বোদ্ধা আমি নই । শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে ও ওই কিঞ্চিত নাড়া ঘাঁটা কে পুঁজি করেই এই লেখা লিখছি ।

আচ্ছা, এই যে আমরা সত্যজিৎ রায়ের দৈহিক উচ্চতা ও গমগমে কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হই , এর জন্য কি ওনাকে কোনো ক্রেডিট দেওয়া যায় ? যায় না । কারন আমরা জানি, উচ্চতার ব্যাপারটা পনেরো আনাই জেনেটিক এবং ওই বাঘের ব্যারিটোন নিয়েই কেউ কেউ জন্মান । অর্থাৎ অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক হাজার চেষ্টা করলেও ওই কণ্ঠস্বর আনতে পারবেন না । সাধনায় অনেকটা হয় কিন্তু পুরোটা নয় । কিন্তু যদি পারতো ?!  তাহলে ক্রেডিট , হাততালি, বাহবা, সাবাশি সব তার প্রাপ্য নয় কি ? অর্থাৎ যেখানে আমাদের পরিশ্রম, নিষ্ঠা, চেষ্টা সেখানেই প্রশংসা প্রাপ্তি ।

এখন পর্যন্ত ফেলুদা হয়েছেন ৬ জন :  সৌমিত্র , সব্যসাচী, টোটা, আবির, ইন্দ্রনীল, পরমব্রত । প্রথমজনই মাপকাঠি , তাই ওনাকে বাদ রেখে বাকিদের দিকে তাকানো যাক । মাপকাঠি এই জন্যেই , যাদের সৌমিত্র-ফেলুদা দিয়ে ফেলুদার সাথে পথ চলা শুরু, তারা কোন মতেই মন থেকে তুলনা করাটা বন্ধ করতে পারবেন না আর সেটাই স্বাভাবিক । সত্যজিতের মতো তো আর কেউ পারবে না তাই তুলনা করাটা অন্যায় -- এই কথাটাই ভিত্তিহীন । সৃজনশীলতার সম্ভাবনায় কোনো ব্রাকেট বা ফুল ষ্টপ হয় না । 

আমার এখন অব্দি দেখা হয়নি তাই তাকেও বাদ রাখতে হচ্ছে । সব্যসাচীর হাইট ও ভয়েস এবং ন্যাচারাল স্মার্টনেস, ফেলুদা ইমেজটা চালিয়ে নিয়ে গেছে বটে কিন্তু পরিচালকের খামতির জন্যই ঠিক জমেনি । চলচিত্র আলো ছায়ার খেলা । তার থেকে ছায়াটা বাদ দিয়ে , আলোর বন্যা বইয়ে দিয়ে ইনডোর শুটিং করলে যে তকমাটা পরে সেটা হলো টিভি সিরিয়াল । এছাড়া আরো অনেক ব্যাপার আছে , সে সব থাক । লেখা দীর্ঘ করে লাভ নেই । টোটা-ফেলুদা নিঃসন্দেহে ভালো কিন্তু শারীরিক অমিলটা বেশ চোখে পরে । আবীর-ফেলুদার মিলের চেয়ে অমিল বেশী । এবার বোমাটা ফাটাই । 

সৌমিত্রর পর, অভিনয় গুণে ফেলুদা চরিত্রকে সব চেয়ে বেশী সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরমব্রত । তার সব চেয়ে বড় খামতি , তার কলেজ পড়ুয়া মুখ । এই খামতির কথা জানেন তিনি , জানেন পরিচালক অরিন্দম বাবু । খামতি আগে জানতে হয় তারপর তা ঢাকতে হয় । ফেলুদা করার মতো কোনো ন্যাচারাল অ্যাডভানটেজ পরমব্রতর নেই । যা আছে সেটা অভিনয় ক্ষমতা । দা গডফাদার ছবিতে পরিবারের ছোট ছেলে থেকে গড ফাদার হয়ে ওঠা অ্যাল পাচিনোর মুখের পরিবর্তন আমরা ভুলবো না । শুধু ভাব ভংগি ও মেক আপ দিয়ে একজন মানুষের মুখের ওই পরিবর্তন যে সম্ভব, সেটা না দেখলে বিশ্বাস হয় না । অতটা না হলেও , পরমব্রত মুখের মাংশপেশির ব্যবহার, চোখ ও হাঁটাচলার ভংগিতে নিজের খামতি অনেকটাই ঢেকেছেন । এবং এর আগে কোনো পরিচালক এই খামতি ঢাকার চেষ্টাটা করেননি । সৌমিত্রর পর, এই প্রথম দেখলাম একজন ফেলুদা, যিনি তার চোখ কাজে লাগালেন । ফেলুদা একজন ভীষণ বুদ্ধিমান মানুষ । সেরিব্রাল । বুদ্ধিমান মানুষের চোখ কথা বলে । পরমব্রত-ফেলুদার চোখে কখনো বুদ্ধির ঝিলিক , কখনো ক্লু পাওয়ার খুশী, কখনো চালাকির রেশ আবার কখনো কাউকে লক্ষ করার মনোযোগ । এছাড়াও মুখে খেলে গেছে রাগ , আনন্দ, নিরাশা এমন নানান অভিব্যক্তি । এবং পরিচালক মহাশয় বিভিন্ন ভাবে ক্যামেরা প্লেসমেন্ট , অ্যান্গেল, টাইট ক্লোস আপ এসবে পরমব্রত কে সাহায্য করে গেছেন । এই চেষ্টাটা সাবাশি দেওয়ার মতোই । 

আমি এখনো মনে করি সৌমিত্রর পর, কোনো ফেলুদা কাস্টিং ঠিকঠাক হয়নি । গল্পে সত্যজিৎ রায়ের করা স্কেচের সাথে ৫ ফেলুদা খাপ খায়না । এবং দ্বিতীয় ফেলুদা থেকেই আমরা দুধের কথা ভেবে,  ঘোলই খেয়ে যাচ্ছি । স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের সাথে ফেলুদা, শংকু, জটায়ু এসব নিয়ে কয়েকবার কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল । তখন আমার বয়েস কম । কিন্তু এটা বুঝতাম , ফেলুদা সম্পর্কে উনি কিন্তু বেশ সিরিয়াস । অবশ্য ওনার সব কাজেই উনি সিরিয়াস ছিলেন । এবং মারাত্মক ডিটেইলিং । এটা কিন্তু ওনার পুত্রের মধ্যে পাইনি । ওনার পুত্র বলেই রেখে ঢেকে বলতে হবে এর কোন মানে নেই । আমি সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত, ওনার বা ওনার পুত্রের তোষামোদকারি নই । দর্শক হিসেবে যেটা খারাপ লাগবে , বলবো । 

সত্যজিৎ সান্নিধ্য লাভ করে, তাঁর সাথে বাস করে, কাজ করেও , যা ছবির মান , সেটা মধ্যম বা নিম্ন, উচ্চ নয় । কপিরাইট এর মালিক, সিনেমা কপিরাইট নিজের কাছেই রাখবেন, নিজেই যা পারেন বানাবেন , বেশ কথা , কিন্তু সব শেষে সেটা আমাকে দেখতে বলা হয়, বিজ্ঞাপিত হয় -- এইখানেই আসে আমার কথা । তাই এসব বলার এক্তিয়ার আমার আছে ।পরিচালক বদলেছে , ফেলুদা চরিত্রের অভিনেতা বদলেছে , কিন্তু অ্যাম্বিয়েন্সটা তৈরী হয়নি । সাবাশ ফেলুদা - গ্যাংটকে গন্ডগোল-এ এই অ্যাম্বিয়েন্সটা খানিকটা পেলাম । 
গল্পের কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে , সেটা মেনে নেওয়া যায় । ফিল্ম একটা অন্য মিডিয়াম , তার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করার দায়বদ্ধতা আলাদা । আজকের দর্শক যে ধরনের ক্রাইমে অভস্ত , তাতে একটা আন্তর্জাতিক  ছোঁয়া দেওয়াটা মানানসই । নেটে প্রচুর সমালোচনা পড়েছি । যেগুলো মনে পরছে , ছুঁয়ে যাই । ১) না তোপসের বান্ধবী দেখানো হয়নি , তোপসের বন্ধু যে মেয়ে । একটা ভিডিও কলে একটি মেয়ের কয়েক সেকেণ্ডর উপস্থিতিতে কুতুব মিনারে ফাটল ধরাবে না । ২) একটা বাড়তি ভিলেইন এর আমদানিতে গল্পের কোন ক্ষতি হয়নি ।  কমলেস বাবুর অভিনয় বেশ ভালোই হয়েছে । ৩) রুদ্রনীলের রাজনীতির চেয়ে অভিনয় হাজার গুণে ভালো । কিন্তু সমস্যা হলো চরিত্র নিশিকান্ত যে জটায়ু নয় ! গল্পে কমিক রিলিফ দরকার সেটা বুঝি, চারঘন্টার একটা ওয়েব সিরিজে আরো বেশী দরকার , কিন্তু ভালো অভিনয় সত্যেও রুদ্রনীল কে অনেক জায়গায় একটু মাত্রাতিরিক্ত মনে হয়েছে । ৪) স্মার্ট অভিনয় মাত্রা ছাড়িয়েছে সৌরসেনীর ক্ষেত্রেও । অনাবশ্যক চরিত্র কিন্তু কিছু বলা যাবে না । একজন চোস্ত বাংলা, হিন্দি, ইংরেজী, নেপালি বলা আকর্ষক মহিলা পুলিশ অফিসার  টাইট পোশাকে ( টাইট হউক, বাঁধা নাই । অতিরিক্ত ঠান্ডায় টাইট পোশাকই ভালো ) ছবিতে হেটে চলে বেড়াবেন, দর্শকের চোখের তৃপ্তি হবে কিন্তু 'মহিলারা আজ কতো এগিয়ে গেছে - আপনি জানেন ?! 'র যুক্তির মোড়ক আমার মুখে ঠুসে দেওয়া হবে । 
যাইহোক , আমার মুল বক্তব্য ফেলুদা কে নিয়ে । এখন অব্দি যতজন ফেলুদা হয়েছেন, সবাই তাদের বেস্ট দিয়েছেন , বেস্ট দিয়েছেন ফেলুদা নিয়ে কাজ করা সব পরিচালকরাও । 

কিন্তু ওই যে বলে ' বেস্ট ইজ নট গুড এনাফ ' ।  এর জন্য পরিচালকরাই দায়ী , তারা মানানসই কাস্টিং করেননি । করেননি অরিন্দম বাবুও । কিন্তু সেটা সত্যেও যতটা পারা যায় , অভিনয় ও কারিগরি নিপুণতা দিয়ে সাবাশ ফেলুদায় পরমব্রত যথেষ্ঠ প্রেজেন্টেবল । ফেলুদা এখন একটা মারাত্মক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ।  তাকে নিয়ে এই বাজার অর্থনীতিতে ব্যবসা হবে না, এটা হয়না । কিন্তু কাজ হচ্ছে, ভাবনা চিন্তা হচ্ছে, এইটাই বড় কথা । অনেকে বলেন, ফেলুদা নিয়ে সত্যজিতের পর আর কারুর কাজ করাই উচিত নয় । এ এক ধৃষ্টতা ! রবীন্দ্রনাথের পর তাঁর গান গাওয়ার ধৃষ্টতা কিছু গায়ক করেছিলেন বলেই আমি ও আমরা জর্জ বিশ্বাস পেয়েছি । মহান সৃষ্টির জনকরা মৃত্যুর পরও থেকে যান ধুপ ধুনো মালায় নয়, তাদের সৃষ্টি নিয়ে আমাদের মুগ্ধতা, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ভাবনা চিন্তার মধ্যে । তাই কাজ চলুক, ভুল হোক, নতুন উদ্দিপনা নিয়ে আজকের প্রজন্ম একটা দারুন কিছু করার আশায় অল্প ভালো, বেশ ভালো বা যাচ্ছেতাই কাজ করুক, বোদ্ধারা "সব গেলো ! এরা সত্যজিৎ কে শেষ করে দিলো " --- বলে চিৎকার করুক , কিচ্ছু যায় আসে না । আমার বিশ্বাস , ঘন ঘন সিগারেট খাওয়া, ছয় ফুট চার ইঞ্চির এক যুবক , যাকে কেউ চেনে না, একটা ভাঙা মুভি ক্যামেরা নিয়ে কাশফুল ভরা ধানখেতের পাশে দাড়িয়ে প্রশ্রয়ের হাসিই হাসবে ।

-------সমাপ্ত -------

© Copyright content. All rights reserved. Author email swamiguptagyan@gmail.com




Thursday 2 March 2023

সত্যজিতের শব্দ খেলা

 সত্যজিতের শব্দ খেলা 

  ---- ইভান

অনেক বাংগালি আছেন যারা সমালোচনা করেছেন ও করেন , সত্যজিৎ বিদেশে পুরষ্কার পাওয়ার জন্যই ছবি বানাতেন । কথাটা ও ধারনাটা এতটাই বোকা বোকা যে এর জন্যই একটা পুরষ্কার দেওয়া যায় । একটাই উদাহরন দিলাম সঙ্গে ছবিতে । যদিও এমন নিদর্শন তাঁর ছবিতে ভুরি ভুরি আছে । নষ্ট নীড় -এ এই সংলাপ নেই । চারুলতায় এই যে ব দিয়ে অনুপ্রাস খেলা এবং তার মধ্য দিয়ে দুটি চরিত্রের মনোভাব টেনে বের করা ---- এর মর্ম বাংলা যে জানে না সে বুঝবে না । 
দুনিয়ার কোনো অনুবাদক নেই যে এর যথার্থ অনুবাদ করতে পারে । তাই ছবির সাব টাইটেলে  lost in translation হতে বাধ্য । বিদেশীরা এই সব বাদ দিয়ে তাঁর ছবির যেটুকু বুঝেছিলো , তাতেই যা কিছু পুরষ্কার । ভাবি, পুরোটা বুঝলে কি হতো ! উনি মূলত আমাদের জন্যই ছবি বানাতেন । হীরক রাজার দেশে ছবির আসল রস তো তার সংলাপে । তার যথার্থ অনুবাদ হয়না । অরণ্যের দিন রাত্রির মেমারি গেম বা সোনার কেল্লায় জটায়ুর সংলাপ , গুগাবাবা-র  'রাজকন্যা কি কম পড়িতেছে ?' , এমন কি জটায়ুর হিন্দী কথা  'আতমারাকসা কে লিয়ে' বা 'নেপাল কা আসত্র' একান্ত ভাবেই আমাদের জন্য, বাংগালির জন্য । তাই  বঙ্গজন্মের একটা মারাত্মক লাভ আমার হয়েছে যে রবীন্দ্রনাথ , সত্যজিৎ, জীবনানন্দ , শক্তি , বিভূতিভূষণ  ও আরো অনেকের অনুবাদ আমায় পড়তে হয়নি । 
© Copyright reserved. 
For detailed article magazine, web mag please mail author at swamiguptagyan@gmail.com





Tuesday 28 February 2023

ক্যামেরার সামনে ক্যামেরাওয়ালা

 ক্যামেরার সামনে ক্যামেরাওয়ালা 


হ্যা সামনে তো বটেই, আর ক্যামেরার পেছনে ? সেখানে তো অগুনতি ক্যামেরাওয়ালা ! ভারতবর্ষের আর কোনো চলচিত্র পরিচালকের বোধহয় এতো ছবি তোলা হয়নি । সিংহ ভাগ কৃতিত্ত্ব অবশ্যই শ্রদ্ধেও প্রয়াত নিমাই ঘোষের । এছাড়াও রঘু রাই , রঘুবীর সিং, বার্থোলোমিও, তারাপদ ব্যানার্জী, হীরক সেন ও আরো অনেকেই । ওনার ঘরে ওনার ছবি তোলা খুব সহজ কাজ ছিল না । ঠিক জানালার সামনে ওনার বসার জায়গা । উনি জানালার দিকে পিঠ দিয়ে বা এক পাশ হয়ে, বসে কাজ করছেন । খোলা জানালা দিয়ে আলো এসে পরছে ওনার কাজের ওপর । ফটোগ্রাফার আলোর মুখোমুখি । অর্থাৎ রোদ ঝলমলে দিনে, সত্যজিৎ রায় প্রায় শিল্যুট । সরাসরি ফিল ইন ফ্লাশ ব্যবহার করলে ( এই ক্ষেত্রে : যথেষ্ট সূর্যের আলো থাকা সত্বেও  ফ্লাশ ব্যবহার করে , আলোর গতিপথ আটকে থাকা কোনো কিছু কে আলোকিত করা ) ওনার কাজের অসুবিধা হবে , ফ্লাশ ছাড়া তুললে ওনাকে পরিষ্কার বোঝা যাবে না ......, তাহলে কি ফিল্ম স্পিড হাই  ? অ্যাপারচার আপ না ডাউন ? কতোটা ? বরং ফ্লাশ বাউন্স করিয়ে যদি ...... । বুঝতেই পারছেন, ওনার ছবি তোলাটাও বেশ চাপের ব্যাপার ছিল । আর এটা সেই সময়ের কথা যখন , analog চলছে, ডিজিটাল ও অটো মোড আসেনি । টুইন লেন্স ও সিংগল লেন্স রিফ্লেক্স যুগ, এল.সি.ডি প্যানেলে টুক করে দেখে নেওয়ার উপায় নেই ছবি কেমন হলো । ওনার ছবি তুলতে এসে অনেক ফটোগ্রাফারই মনের মতো ছবি তুলতে পারেননি । ষ্টিল ফটোগ্রাফির টেকনিকাল দিক সত্যজিৎ নিজে যথেষ্টই ভালো জানতেন । তাহলে কি ইচ্ছে করেই একটু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন ? জানা নেই ।

এই পোস্টের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাই সেই সব আলোকচিত্রশিল্পীদের , যাদের  ফ্রেম বন্দী সেই সব প্রয়াস আমাদের এখনো আনন্দ দেয় । এবং বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই প্রয়াত নিমাই ঘোষ মহাশয় কে । ওনার Ray Documentation নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের এক নজির হয়ে থাকবে । 
Photo source : 1 - net, 2 to 6 - taken by Padmashri Pablo Bartholomew , credit India Times










#SatyajitRay #SatyajitRayCreations #RaghuRai #RaghubirSingh #TarapadaBannerjee #SamyamoySenGupta #NemaiGhosh #Ivan #Photographer #BishopLefroyRoad #IndoorPhotography

Sunday 22 January 2023

Book Cover Designer Ray

জিম করবেটের বিখ্যাত বই Man Eaters Of Kumaon এর বাংলা অনুবাদ বই এর কভার ডিজাইন করেছিলেন সত্যজিৎ রায় । অনবদ্য লেআউট তো প্রথমেই চোখে পরবে । কিন্তু তার সাথে রয়েছে আরো একটি ব্যাপার । চামড়াটি গুলিবিদ্ধ দেখতেই পাচ্ছেন । একটি বুলেট একদিক দিয়ে ঢুকে আবার বেরিয়েছে অন্য দিক দিয়ে । দুটি ছিদ্র দুই দিকে , অর্থাৎ সামনে ও পেছনের মলাটে । প্রথম ছিদ্রর চেয়ে দ্বিতীয় ছিদ্র আকারে বড় । কেন ? কারন এফোঁড় ওফোঁড় করা বুলেট ঢোকার সময় যে ছিদ্র করে , বেরোনোর সময় তার চেয়ে বড় ছিদ্র করে বেরিয়ে যায় । বুলেট উন্ডের এই ডিটেইল ডিজাইন দেখলেই বোঝা যায় , আর সব ছেড়ে দিলেও, শুধু বইয়ের কভার ডিজাইনার হিসেবেও ওনার কি অসাধারন ট্যালেন্ট ছিল । 





RAY TYPOGRAPHY

 সত্যজিৎ রায় আবিষ্কার করেন এই চারটি ইংরেজি স্ক্রিপ্ট টাইপোগ্রাফি : রে রোমান , হলিডে স্ক্রিপ্ট , ড্যাফনিস ও বিজার ( জ এর উচ্চারন জ ও ঝ এর মাঝামাঝি ) । ১৯৬০ সালে ফ্লোরিডার একটি কম্পানি তাঁকে বিশেষ ভাবে নিয়োগ করে ছিল এই কাজে । আবিষ্কারগুলি ঠিক কেমন তা জানতে সংগের চারটি ছবি দেখুন । 








Friday 9 December 2022

...... বাকিটা ইতিহাস :



তপেসের পাশেই বসে ছিলাম । ভদ্রলোক কানপুর থেকে উঠলেন । ভাবগতিক দেখে আন্দাজ করলাম , বার্থ ওনার রিজার্ভ করা । একটু সরে বসলাম তপেসের দিকে । ভদ্রলোক ওনার বার্থে বসেই আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন  "সব টাইম জাদা মাংতা হায় !" বুঝলাম ভদ্রলোক ওনার মালপত্র বয়ে আনা কুলির কথা বলছেন । আমি ভদ্রতাসূচক মাথা নাড়লাম । তারপরও উনি দুবার বিড় বিড় করে বললেন " হাইলি ডিস্টার্বিং !" এরপর ওনার নজর পড়লো উল্টোদিকে বসে থাকা ফেলুদার দিকে । আমি তপেসের দিকে তাকিয়ে 'এখন উঠছি' গোছের একটা ইংগিত করে নিজের বার্থে ফিরে গেলাম । চলে আসতে আসতে কানে এলো , ভদ্রলোকের হিন্দি  "আপ লোগ কিতনা দূর যা রহে হ্যায়  ?" .................. বাকিটা ইতিহাস ।

_____ © ইভান ।